প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । আজকের খবর ডেস্ক
আজকের খবর অনলাইন
ইরানের ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের প্রতি শোক এবং ইরানি জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে সোমবার (৩০ জুন) ইরান দূতাবাসে উপস্থিত হন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা। দলটির পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের দূতাবাসে গিয়ে শোক বইতে স্বাক্ষর করেন এবং রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও মিডিয়া সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। তারা ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোসির সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন এবং ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানিদের স্মরণে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
সাক্ষাতে জামায়াত নেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন, কূটনৈতিক শিষ্টাচার এবং জাতিসংঘ সনদের সীমা লঙ্ঘন করে ইসরায়েল যেভাবে ইরানের ভূখণ্ডে সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে, তা শুধু অন্যায় নয়, বরং এটি যুদ্ধাপরাধের শামিল। তারা জানান, ওই হামলায় ইরানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তা, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্য ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
ডা. তাহের বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সব সময়ই বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের পাশে থেকেছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা যুদ্ধবাজ শক্তির বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছি, ইসরায়েলের এই ন্যাক্কারজনক হামলাও তার ব্যতিক্রম নয়। এই ঘটনায় আমরা ইরানের জনগণের পাশে আছি এবং দোয়া করি, আল্লাহ যেন নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করেন।”
সাক্ষাতের সময় ডা. তাহের দূতাবাসে সংরক্ষিত শোক বইতে স্বাক্ষর করেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি জানান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সংকট ইরানকে আরও ঐক্যবদ্ধ করবে এবং বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের দাবিতে মুসলিম বিশ্বকে আরও সংহত হতে উদ্বুদ্ধ করবে।
জামায়াত নেতাদের এই সহমর্মিতা ও প্রতিবাদের বার্তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেন ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোসি। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলে এসেছে। জামায়াত নেতৃবৃন্দের এই পদক্ষেপ ইরানি জনগণের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হবে।” তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
বৈঠকের একপর্যায়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। তারা বলেন, দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
এই সাক্ষাৎ ও শোক জ্ঞাপন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ধরনের পদক্ষেপ বিরল হলেও, মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতিতে বাংলাদেশের জনগণের অবস্থান ও মনোভাব প্রতিফলিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ ও ফিলিস্তিনসহ আশপাশের দেশগুলোর ওপর তার আগ্রাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার ঝড় বইছে।
জামায়াতের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ কেবল রাজনৈতিক বার্তাই নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতি একটি প্রতিশ্রুতিও বহন করে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। ইরানও এটিকে কৌশলগত সমর্থনের একটি নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করছে। সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-ইরান সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেতে পারে এমন ইঙ্গিত মিলছে এই সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে।